Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বঙ্গবন্ধু : কৃষির প্রবাদ পুরুষ

বাংলাদেশ নামের দেশটি দীর্ঘ ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী এক যুদ্ধের ফসল। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে সূচিত হয়েছিল যে মুক্তিযুদ্ধের, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর অভ্যুদয় ঘটেছিল স্বাধীন বাংলাদেশের। বাঙালি পেয়েছিল একটি স্বাধীন বাংলাদেশ সত্য, কিন্তু দীর্ঘ দিনের যুদ্ধ সংগ্রামে তখন বিপর্যস্ত ছিল দেশের কৃষি ও অর্থনীতি, জীবন ও জনপদ। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু স্বাধীন বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন ও ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দায়িত্ব নিয়েই তিনি শুরু করেছিলেন এক সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণের কাজ। খুব সহজ ছিল না সে কাজ। পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনীর পোড়ামাটির বাংলাদেশকে তিনি সবুজে শ্যামলে ভরে দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন নিয়ে শুরু করেছিলেন সে যাত্রা। সে যাত্রাপথে ছেদ পড়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু তাঁর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সে স্বপ্নকে নিয়ে বাস্তবে রূপদান করে ধীরে ধীরে গড়ে তুলছেন সোনার বাংলা, কৃষিতে সমৃদ্ধ এক বাংলাদেশ। এগিয়ে চলেছে কৃষি উন্নয়নের ধারা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের কৃষি ও বঙ্গবন্ধুর কৃষি বিপ্লবের ডাক
বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৯৭২ সালে ছিল সাড়ে সাত কোটি। সে মানুষের সারা বছর খাওয়ানোর মতো কোনো খাদ্য ছিল না দেশে। তাঁর দেয়া বিভিন্ন বক্তৃতার মধ্যে সে দুরবস্থার উল্লেখ পাওয়া যায়। তিনি বলেছিলেন, ‘গত ২৫ বছর থেকে বাংলাদেশের খাদ্য ঘাটতি ২৫ লক্ষ টন। কিন্তু এ খাদ্য ঘাটতি পূরণের জন্য অতীতে কোনো বন্দোবস্ত করা হয়নি। অনেকে এসেছেন, নতুন কথা বলেছেন- শুধু আমাদের সম্পদকে লুট করা নয়, আমাদের কাঁচামাল বিক্রি করে পশ্চিম পাকিস্তানকে উন্নত করা হলো। বাংলাকে মর্টগেজ রেখে পশ্চিম পাকিস্তানে আমার অর্থে গড়ে উঠল করাচি, আমার অর্থে গড়ে উঠল লাহোর, হায়দারাবাদ, ইসলামাবাদ। অর্থ কোথা থেকে এলো, কিভাবে এলো আপনারা জানেন এ ইতিহাস। আজ বাংলাদেশের অবস্থা বড় শোচনীয়। পশ্চিম পাকিস্তানিরা ১৫০ জন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করেছে। এর পেছনে বিরাট ষড়যন্ত্র ছিল, যাতে এ দেশ আর মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে।’ এই চরম সত্যকে তিনি উপলব্ধি করেছিলেন। তিনি এও বলেছিলেন, ‘খাবার অভাব হলে মানুষের মাথা ঠিক থাকে না। সে জন্য খাওয়ার দিকে নজর দেওয়ার প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। আমাদের চেষ্টা করতে হবে অন্নহীন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দিতে।’
বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ১৯৭২ সালে প্রকাশিত ‘ঞযব ঝঃধঃব ড়ভ ঋড়ড়ফ ্ অমৎরপঁষঃঁৎব ১৯৭২’ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ‘বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে যুদ্ধাবস্থার কারণে কেবলমাত্র আখ ছাড়া অন্য সব কৃষি উৎপাদন মারাত্মকভাবে হ্রাস পায়। এজন্য বাংলাদেশে এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার জন্য চাষের জমি বাড়িয়ে ও উচ্চফলনশীল জাত, সার ও কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো প্রত্যাশিত।’ বাংলাদেশ বিনির্মাণে তাই তিনি স্বাধীনতার পরপরই প্রথম গুরুত্ব দিয়েছিলেন কৃষির ওপর। কেননা তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন, দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। খাদ্য ঘাটতিতে থাকা একটা দেশের মানুষ সব সময়ই খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে থাকে। খাদ্যের অভাবে কিছু মানুষকে অনাহারে থাকতে হয়, এমনকি অনাহারে মৃত্যু বা দুর্ভিক্ষের মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে যে দেশের এত মানুষ মরেছে, সেখানে খাদ্যের অভাবে কোন মানুষের মৃত্যুকে তিনি কোনোভাবেই মেনে নিতে চাননি।
শুধু মুক্তিযুদ্ধই নয়, সত্তরের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়, বাহাত্তরের দীর্ঘ অনাবৃষ্টি- খাদ্য উৎপাদন ক্ষেত্রকে করেছিল বিপর্যস্ত। মানুষের মুখে রোজ দুবেলা আহার জোগানো ছিল সে সময়ের এক কঠিন চ্যালেঞ্জ। বঙ্গবন্ধু সে সময় এ কঠিন চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলার জন্য ১৯৭২-৭৩ সালে বাজেটে ১২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছিলেন শুধু বিদেশ থেকে খাদ্য কেনার জন্য। ১৯৭৩ সালের ১৩ ফেব্রæয়ারি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহে প্রদত্ত এক ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘গত বছর ২৭ লক্ষ টন খাদ্য আনতে হয়েছে বিদেশ থেকে কিনে, ভিক্ষা করে। এই বছর ১২৫ কোটি টাকার খাবার কেনার ব্যবস্থা করেছি বাংলাদেশের সম্পদ থেকে। জানিনা কেউ দেবে কি দেবে না? মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে পারি না; তাই ১২৫ কোটি টাকার খাবার কিনতে বাধ্য হয়েছি। দেশের মানুষের অবস্থা খারাপ। সাত মাস বৃষ্টি হয় নাই। বাংলাদেশে যেমন এখন পানি নাই, আবার যখন বন্যা আসে তখন সব ভাসিয়ে নিয়ে যায়।’ এই বাস্তবতার নিরীখে তিনি তখন বাংলাদেশে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন, এ দেশের মানুষকে বাঁচাতে হলে অন্য দেশ থেকে চাল কিনে বা খাদ্য এনে বাঁচানো যাবে না। কে কখন কতটুকু খাদ্য দেবে তা  অনিশ্চিত। তাই তিনি দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই রাগ করবেন না, দুনিয়া ভরে চেষ্টা করেও আমি চাউল কিনতে পারছি না। চাউল পাওয়া যায় না। যদি চাউল খেতে হয় আপনাদের চাউল পয়দা করে খেতে হবে, না হলে মুজিবুর রহমানকে বেটে খাওয়ালেও হবে না।’ কৃষি বিপ্লবের কথা বলে বঙ্গবন্ধু প্রকৃতই কৃষি উন্নয়নের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সে সময় ৫০০ কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেটের মধ্যে ১০১ কোটি টাকাই তিনি রেখেছিলেন কৃষি উন্নয়নের জন্য যা ছিল তখনকার সময়ে এক দুঃসাহসী উদ্যোগ।
প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ও কৃষি উন্নয়ন
বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন তার পেছনে ছিল এক জটিল ও দুঃসহ প্রেক্ষাপট- সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জের এক অষ্পষ্ট ভবিষ্যৎ। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তাঁকে ভাবতে হয়েছিল ভারত থেকে ফিরে আসা প্রায় ১ কোটি বাঙালির পুনর্বাসন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রত্যাহার, মুক্তিযুদ্ধের দালালদের বিচার করা ইত্যাদি। কিন্তু তিনি কখনো হাল ছাড়েননি। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়েই তিনি প্রণয়ন করলেন প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা। কৃষকদের ও কৃষি উন্নয়নের কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধু একটি পূর্ণাঙ্গ কৃষি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেন। দেশকে খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার জন্য বঙ্গবন্ধু সেই পরিকল্পনা গ্রহণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যাতে পড়ে না থাকে এবং জমির ফলন যাতে বৃদ্ধি পায় তার জন্য দেশের কৃষক সমাজকেই সচেষ্ট হতে হবে।’
কৃষি শিক্ষা ও গবেষণায় গুরুত্ব প্রদান
বঙ্গবন্ধু কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে তখন গুরুত্ব দেন কৃষি গবেষণা ও কৃষি শিক্ষার। তিনি ১৯৭৩ সালে কৃষি শিক্ষায় মেধাবীদের           আকৃষ্ট করার জন্য চাকরি ক্ষেত্রে কৃষিবিদদের প্রথম শ্রেণির পদমর্যাদা প্রদান করেন। কৃষি শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়। পুনর্গঠন করা হয় তুলা উন্নয়ন বোর্ড, হর্টিকালচার বোর্ড, বীজ প্রত্যয়ন এজেন্সী, প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণের ফলে কৃষি খাতে প্রায় ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়, বাড়ে খাদ্য শস্যের উৎপাদন।
কৃষি গবেষণা কার্যক্রমকে শক্তিশালী করার উদ্দেশ্যে  ১৯৭৩ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট। স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট। এসব প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে দেশে ধান ও অন্যান্য ফসল উৎপাদনে উচ্চফলনশীল জাত এবং প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের নানামুখী গবেষণার ফলে দেশ আজ মাংস, ডিম ও স্বাদু পানির মাছ উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনকে সেচপাম্প, সার ও উন্নত জাতের বীজ উৎপাদন, সংগ্রহ ও বিতরণের দায়িত্ব দেয়া হয়। এর ফলে স্বাধীনতার পর রাসায়নিক সারের ব্যবহার, সেচকৃত জমি ও উন্নত জাতের ধানের জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এ সময় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক) কর্তৃক প্রদত্ত স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি প্রাতিষ্ঠানিক  ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। তিনি কয়েক লক্ষ কৃষি  ঋণের সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থাও করেন। এ ছাড়া ভূমিহীন কৃষকদের নামে বন্দোবস্ত দেয়া হয় খাস কৃষিজমি। কৃষি উৎপাদনে উৎসাহ দানের লক্ষ্যে ১৯৭৩ সালে গঠিত হয় জাতীয় কৃষি পুরস্কার তহবিল।
কৃষকদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা
বঙ্গবন্ধু তাঁর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে এ দেশের কৃষক শ্রমিকদের সম্বোধন করে তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করেছিলেন, কৃষকদের সাথে থাকার ও কৃষকদেরও তাঁর সাথে থাকার উদাত্ত আহŸান জানিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু যখন দেশের শাসনভার গ্রহণ করেন তখন এ দেশের শতকরা ৮৫ ভাগ লোক ছিল কৃষির ওপর নির্ভরশীল। এ দেশের কৃষক-শ্রমিকদের তিনি খুব ভালোবাসতেন ও সবসময় তাঁদের উন্নতির চিন্তা করতেন।  কৃষকদের তাচ্ছিল্য বা অসম্মান করার কথা তিনি কখনো কল্পনাও করতেন না। এ কথার প্রমাণ মেলে সে সময় জাতিসংঘে দেয়া তাঁর এক ভাষণে। সে সময় তিনি বলেছিলেন, ‘করাপশন আমার বাংলার কৃষকরা করে না। করাপশন আমার বাংলার মজুররা করে না। করাপশন করি আমরা শিক্ষিত সমাজ।’ কৃষকদের দিয়েছিলেন তিনি সোনার বাংলা গড়ার মূল কারিগরের মর্যাদা। এই যে উদারতা, বুক আগলে কৃষকদের সম্মান রক্ষা করা- এ কেবল বঙ্গবন্ধুর পক্ষেই সম্ভব।
কৃষকদের জন্য শুধু মুখের কথা, আবেগ প্রকাশ বা হৃদয়ের উদারতা প্রকাশই নয়, বাস্তবে তাঁদের জন্য বঙ্গবন্ধু বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে ২৬ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবসে বেতার-টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি যে ভাষণ দেন, সেখানেও তিনি কৃষকদের কথাই বলেন এভাবে, ‘আমাদের চাষিরা হলো সবচেয়ে দুঃখী ও নির্যাতিত শ্রেণী এবং তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের উদ্যোগের বিরাট অংশ অবশ্যই তাদের পেছনে নিয়োজিত করতে হবে। সম্পদের স্বল্পতা থাকা সত্তে¡ও আমরা চাষিদের স্বল্পমেয়াদি সাহায্য দানের জন্য ইতোমধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। ২৫ বিঘার কম জমি যাদের আছে তাদের খাজনা চিরদিনের জন্য মওকুফ করা হয়েছে। ইতঃপূর্বে সমস্ত বকেয়া খাজনা মওকুফ করা হয়েছে। তাকাবি ঋণ বাবদ ১০ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে এবং ১৬ কোটি টাকা টেস্ট রিলিফ হিসেবে বিতরণ করা হয়েছে।’
সমন্বিত ভাবনা
বঙ্গবন্ধু সব সময়ই বলতেন, ‘ আমাদের দেশের জমি এত উর্বর যে বীজ ফেললেই গাছ হয়, গাছ হলে ফল হয়। সে দেশের মানুষ কেন ক্ষুধার জ্বালায় কষ্ট পাবে।’ তিনি মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছিলেন যে, এ দেশে যেমন সোনার মাটি ও মানুষ আছে, তেমনি আছে কৃষির অপার সম্ভাবনা। এমন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনীতিকে মজবুত করতে হবে। তাঁর এক ভাষণে তিনি এ কথা উল্লেখ করে বলেছিলেন ‘কৃষি ও কৃষক বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।’ তিনি এটাও বুঝতেন, কৃষির উন্নতি মানে শুধু ধান-গম বা ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি নয়। ভাত-রুটি খেয়ে পেট ভরে ঠিকই, কিন্তু মেধাবী জাতি গঠনে দরকার সুষম খাদ্য ও পুষ্টি। এ ছাড়া  মেধাবী জাতি ছাড়া কোনো দেশের উন্নতি হয় না। সেজন্য তিনি প্রধান খাদ্যের পাশাপাশি মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদির উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও জোর দেন। তিনি সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার ওপর জোর দেন। যৌথ খামার গড়ে তোলার আহŸান জানান। তিনি বলেন, ‘খাদ্য বলতে শুধু ধান, চাল, আটা, ময়দা আর ভুট্টাকে বুঝায় না বরং মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, শাকসবজি এসবকে বুঝায়। সুতরাং কৃষির উন্নতি করতে হলে এসব খাদ্যশস্যের সমন্বিত উৎপাদনের উন্নতি করতে হবে।’
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা
বঙ্গবন্ধুর প্রথম স্বপ্ন ছিল এ দেশের স্বাধীনতা অর্জন ও সাধারণ মানুষের মুক্তি। স্বাধীনতা অর্জনের পর তাঁর দ্বিতীয় স্বপ্ন ছিল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করা। বাংলাদেশকে তিনি সোনালি ফসলের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, প্রতি ইঞ্চি জমিকে তিনি চাষের আওতায় এনে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে চেয়েছিলেন, প্রতিটি মানুষের জন্য নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন উন্নত খাদ্য, আশ্রয় ও জীবন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দেশের প্রতি মানুষ খাদ্য পাবে, আশ্রয় পাবে, শিক্ষা পাবে উন্নত জীবনের অধিকারী হবে- এই হচ্ছে আমার স্বপ্ন।’ তিনি ৩ জুন ১৯৭২ সালে সমবায় ইউনিয়ন আয়োজিত সমবায় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে তার স্বপ্নের কথা বলেন, ‘বাংলাদেশ আমার স্বপ্ন, ধ্যান, ধারণা ও আরাধনার ধন। আর সে সোনার বাংলা ঘুমিয়ে আছে চির অবহেলিত গ্রামের আনাচে-কানাচে, চির উপেক্ষিত পল্লীর কন্দরে কন্দরে, বিস্তীর্ণ জলাভূমির আশেপাশে আর সুবিশাল অরণ্যের গভীরে। ভাইয়েরা আমার- আসুন সমবায়ের জাদুস্পর্শে সুপ্ত গ্রাম বাংলাকে জাগিয়ে তুলি। নব-সৃষ্টির উন্মাদনায় আর জীবনের জয়গানে তাকে মুখরিত করি।’ দূরদর্শী এ ভাষণে তিনি সমবায়ের কথা বললেও তা মান্ধাতার আমলের পুরনো ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে  আধুনিক জোটবদ্ধ যৌথ খামারের ধারণাকে প্রতিষ্ঠিত করার ওপর তিনি জোর দিয়েছিলেন। তিনি সে সময়েই বুঝেছিলেন, মানুষকে শিক্ষিত করে তুললে তারা অন্য চাকরি করবে, ভিন্ন পেশায় চলে যাবে। কৃষির ওপর নির্ভর করবে না। দিন দিন কৃষি শ্রমিকের প্রাপ্যতা কমবে। তাই কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে শ্রম নির্ভরতা কমিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। যেভাবে পরিবার ও জমি ভাঙ্গছে, চাষের জমিগুলো দিন দিন আয়তনে ছোট হচ্ছে- তাতে যন্ত্রের মাধ্যমে চাষ করা কঠিন। তাই ভবিষ্যতে কৃষির উৎপাদন খরচ ও শ্রমিক সম্পৃক্ততা কমিয়ে উৎপাদন বাড়াতে হলে যৌথ বা বিশেষ সমবায় পদ্ধতি প্রবর্তন করতে হবে। তাঁর এক বক্তব্যে এই বিশেষ পদ্ধতিতে চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার কি আশ্চর্য এক সূত্র তিনি দিয়েছিলেন যার ভেতরে শুধু কৃষি উন্নয়নই নয়, স্থানীয় রাজস্বে পল্লী উন্নয়নেরও রূপরেখা নিহিত ছিল। তিনি চেয়েছিলেন ‘প্রতি গ্রামে যৌথ চাষ হবে এবং ফসলের ভাগ যাবে মালিক, শ্রমিক, গ্রাম তহবিল- এ তিন জায়গায়’। এসব স্বপ্নের মধ্যেই তিনি খুঁজে নিয়েছিলেন স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ। তিনি বলেছিলেন, ‘এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে।’
সপরিবারে তাঁকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট  নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। ইতিহাসের এক জঘন্যতম কালো অধ্যায়ের সূচনা হয় সেখান থেকে। যে শেখ মুজিবুর রহমান জেল, জুলুম, হুলিয়া, নির্যাতন সহ্য করেছেন তাঁর প্রিয় বাঙালিদের জন্য, তাদেরই কয়েকজন তাঁকে হত্যা করে এ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তারা জানতো না যে, বঙ্গবন্ধুকে কখনো মেরে ফেলা যায় না, মুছে ফেলা যায় না তাঁর স্বপ্ন ও আদর্শকে, থামানো যায় না বাংলাদেশের উন্নয়নকে। তাঁর স্বপ্ন ও ভাবনাকে ভিত্তি করে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আরও বলিষ্ঠ নীতি নিয়ে এ দেশের কৃষি উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এজন্য তাঁর সরকার পরিচিতি পেয়েছে কৃষিবান্ধব সরকার হিসেবে। তাঁর গতিশীল নেতৃত্ব ও পরিকল্পনায় দেশ আজ খাদ্যশস্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ যা বঙ্গবন্ধুরই চাওয়া ছিল। এখন আমরা মাংস উৎপাদনেও স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষির নানা ক্ষেত্রে এখন অর্জিত হয়েছে অনেক সাফল্য। বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে কৃষি উন্নয়নের রোল মডেল। কৃষি উৎপাদনের নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখন মর্যাদার আসন লাভ করেছে। বাংলাদেশ এখন পাট রপ্তানিতে বিশ্বে প্রথম ও পাট উৎপাদনে দ্বিতীয়, কাঁঠাল উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়, সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, মৎস্য উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ, বদ্ধ জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম, আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, আলু উৎপাদনে বিশ্বে অষ্টম, মৌসুমী ফলের উৎপাদনে বিশ্বে দশম। ইতোমধ্যে আমরা পাট, ধৈঞ্চা ও ইলিশের জন্মরহস্য আবিষ্কার করেছি, পেয়েছি ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে ইলিশ ও খিরসাপাত আমের স্বীকৃতি। এটাই তো স্বাধীনতার সার্থকতা। কৃষি উৎপাদনে এরূপ অনেক সাফল্য অর্জিত হওয়ার পর বর্তমান সরকার এখন নজর দিয়েছে পুষ্টি উন্নয়ন ও নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনের ওপর যাতে দেশের মানুষ খাদ্য গ্রহণ করে সুস্থ থাকতে পারে, গড়ে উঠতে পারে একটি মেধাবী জাতি।

 

মৃত্যুঞ্জয় রায়

উপপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫, মোবা: ০১৭১৮২০৯১০৭, ই- মেইল :  kbdmrityun@yahoo.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon